• ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মেঘের রাজ্য আর রাঙামাটির ছাদ ‘সাজেক ভ্যালী’

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত অক্টোবর ২২, ২০২০
মেঘের রাজ্য আর রাঙামাটির ছাদ ‘সাজেক ভ্যালী’

দুচোখে যতোদূর পর্যন্ত দৃষ্টি যায়, দেখা মেলে সারি সারি সবুজ পাহাড়,আর তার উপরে তুলার মত সাদা সাদা মেঘ। সবুজের রাজ্যে এ যেন সাদা মেঘের হ্রদ! নিশ্চয়ই ভাবছেন অপরূপ সুন্দর এই প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পাড়ি দিতে হবে কোন সুদূর অজানা দেশে? না প্রিয় পাঠক, আপনার আমার প্রিয় মাতৃভূমিতেই রয়েছে এরকম এক মেঘের রাজ্য যার নাম ‘সাজেক ভ্যালি’ যার রূপ অতুলনীয়।

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মনোরম দৃশ্য পরিপূর্ণ ‘সাজেক’৷ জায়গাটির অবস্থান রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায়৷ সাজেকের পাহাড়চূড়া থেকে রাঙ্গামাটির চারপাশের বড় একটা অংশ দেখা যায় বলে একে ‘রাঙ্গামাটির ছাদ’ বলা হয়৷পাহাড়ের নজরকাড়া সৌন্দর্য আর সেখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা সাজেকের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ৷ সারা বছর জুড়েই নানা বর্ণে বর্ণিল সাজে সেজে থাকে সাজেক। তাই বছরের যে কোনো সময়ই আপনি সাজেক ভ্রমণ করলে পাবেন মনোরম স্নিগ্ধ প্রকৃতি। তবে বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তে সাজেকের চারপাশে মেঘের খেলা দেখা যায় বেশি। তাই এই সময়টাই সাজেক ভ্রমণের জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত। এসময় দিনের কিছু সময় পাহাড়ের চূড়া থাকে কুয়াশায় আচ্ছন্ন। শেষ বিকেল পেরিয়ে পশ্চিমের আকাশে পাহাড়ের কোলে হেলে পড়া সূর্যের সোনালি রংয়ে মোড়ানো সবুজ পাহাড়- এ এক অপূর্ব মুহূর্ত। সাজেকে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতেই নৈর্সগিক নিরবতা নেমে আসে চারপাশে। হ্যালিপেডের চূড়ায় স্নিগ্ধ বাতাসে শুয়ে তারায় তারায় পূর্ন আকাশ দেখলে মন আর দৃষ্টি যেন আকাশেই পড়ে থাকে। এতসব বর্ণনা শুনে হয়তো ভাবছেন সাজেক ভ্যালি যাবেন শিগগিরই। কিন্তু তার আগে তো কিছু তথ্য জেনে নেয়া প্রয়োজন–

সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার সর্বউত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। আর দীঘিনালা থেকে প্রায় ৪৯ কিলোমিটার। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত। সাজেক ইউনিয়ন হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন; যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। এখানে সাজেক বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে।
সাজেক রুইলুইপাড়া, হামারিপাড়া এবং কংলাক পাড়া, এই তিনটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত আর কংলাক পাড়া ১,৮০০ ফুট উচ্চতায় কংলাক পাহাড়-এ অবস্থিত। সাজেকে মূলত লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা উপজাতি বসবাস করে। কর্ণফুলী নদী থেকে উদ্ভূত সাজেক নদী থেকে সাজেক ভ্যালির নাম এসেছে।

কীভাবে যাবেনঃ খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর থেকে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন। এক গাড়িতে করে ১২-১৪ জন যেতে পারবেন। সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশ প্রশাসন এ পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় দিন দিন বাড়ছে পর্যটক সংখ্যা। আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, শীতকালে দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকোর্ট শুরু হবে সকাল ৯ টা থেকে ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে। তাই ওই সময়ের আগেই আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায়। সকালের এসকোর্ট মিস করলে অপেক্ষা করতে হবে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত। এসকোর্ট ছাড়া যাবার অনুমতি পাবেন না।

কোথায় থাকবেনঃ পাহাড়ের অসাধারণ দৃশ্য যদি আপনি সাজেকের কোন কটেজে বসেই উপভোগ করতে চান তাহলে বুকিং দিতে পারেন এই রিসোর্ট বা কটেজ গুলো- সাজেক রিসোর্ট, রুনময় রিসোর্ট, মেঘ মাচাং, লুসাই কটেজ, মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট, ম্যাডভেঞ্চার রিসোর্ট, আদিবাসী ঘর ইত্যাদি।
যা যা খেয়াল রাখবেনঃ যেকোন ভ্রমণস্থানে যাওয়ার সময় অবশ্যই সাথে করে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সহ যা যা লাগে সাথে নিয়ে যাবেন। আর আপনার আশেপাশের পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনার, তাই পরিবেশের ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।

লিখেছেন :: নিশাত তাসনিম নীতু, শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930