নিজস্ব প্রতিবেদক :: একবিংশ শতাব্দীতে অত্যন্ত গুরুতর আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে ‘নিরাপদ সড়ক’। সড়ক নিরাপত্তা বলতে সড়ক ব্যবহারকারীদেরকে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আহত বা নিহত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য পদ্ধতি ও সমাধানসমূহের আলোচনাকে বোঝায়। সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে রয়েছে পথচারী, সাইকেল আরোহী, রিকশা ও ভ্যান চালক ও আরোহী, বিভিন্ন ধরনের (দুই, তিন, চার বা তারও বেশি চাকাবিশিষ্ট) মোটরযান চালক ও আরোহী, গণপরিবহন ব্যবস্থা যেমন বাস, ট্রাম, ইত্যাদির চালক ও আরোহীগণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর ১০ লক্ষেরও বেশি লোক (সিংহভাগ ক্ষেত্রে সুস্থ সবল মানুষ) সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় এবং প্রায় ৫ কোটি লোক আহত হয়। সড়ক দুর্ঘটনাকে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের প্রাণহানির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উন্নত দেশগুলির তুলনায় উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলিতে সড়ক নিরাপত্তা অনেক কম এবং সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের হার অনেক বেশি।
আজ ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে সড়ককে নিরাপদ করার লক্ষ্যে আন্দোলন করে আসছে। সড়ককে নিরাপদ করার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়।
২৬ বছর আগে চট্টগ্রামের অদূরে চন্দনাইশে বান্দরবানে স্বামী ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে যাবার পথে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় জাহানারা কাঞ্চন নিহত হন। রেখে যান অবুঝ দুটি শিশু সন্তান জয় ও ইমাকে। ইলিয়াস কাঞ্চন সে সময় সিনেমার শুটিংয়ে বান্দরবান অবস্থান করছিলেন। স্ত্রীর অকাল মৃত্যুতে দু’টি অবুঝ সন্তানকে বুকে নিয়ে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে ইলিয়াস কাঞ্চন নেমে আসেন পথে। পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়- এই স্লোগান নিয়ে গড়ে তোলেন একটি সামাজিক আন্দোলন ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’।
আজ ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস এবং মরহুমা জাহানারা কাঞ্চনের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। যার অকাল মৃত্যুতে সড়ককে নিরাপদ করার এই সামাজিক আন্দোলনের জন্ম।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রী সভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অনুমোদন করা হয়। একই বছরের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়।
‘জীবনের আগে জীবিকা নয়, সড়ক দুর্ঘটনা আর নয়’-এ প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি উপলক্ষে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সরকারিভাবে রাজধানীসহ প্রতি জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। দিবসটি পালনে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে রয়েছে ক্রোড়পত্র প্রকাশ, আলোচনা সভা, র্যালি ও সড়ক সচেতনতা কার্যক্রম। এর পাশাপাশি পরিবহন মালিক, চালক, যাত্রী ও পথচারীদের সচেতন করার লক্ষ্যে বিতরণ করা হয় লিফলেট, পোস্টার ও স্টিকার।
তা সত্ত্বেও সড়কে অনিয়মের দৃশ্যে আদৌ কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। নির্দিষ্ট দিবস ছাড়াও সড়কে প্রতিদিনই ট্রাফিক আইন অমান্য করে চলছেন গাড়ি চালকেরা, এমনকি পথচারীদের মধ্যেও নেই সচেতনতা। ফলে সড়কে দুর্ঘটনা দিনদিন বাড়ছে।ব্যস্ত রাস্তা গুলোতে দেখা যায়- মেয়াদোত্তীর্ণ ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ির অবাধ চলাচল, গণপরিবহনগুলোর প্রতিযোগিতামূলক চলাচল,হেলমেটবিহীন চালক ও আরোহী, ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে যাত্রীর বাসে ওঠার চেষ্টা,অদূরে পদচারী–সেতু থাকা সত্ত্বেও সড়ক বিভাজক গলে পারাপার ইত্যাদি নানা নিয়ম ভঙ্গের নমুনা। মোটকথা, পথচারী,যাত্রী এবং চালকদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সঠিক নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমেই সড়ক দুর্ঘটনার হার কমানো সম্ভব। অতএব, নিজের জীবন রক্ষার তাগিদে সকলের সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ অতীব জরুরি।
নিশাত তাসনিম নীতু / দৈনিক হাকালুকি