• ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জুড়ীর প্রাকৃতিক ঝর্ণা সীতাকুণ্ড, বাড়ছে পর্যটকের ভীড়

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত অক্টোবর ১, ২০২০
জুড়ীর প্রাকৃতিক ঝর্ণা সীতাকুণ্ড, বাড়ছে পর্যটকের ভীড়

খোরশেদ আলম, জুুুড়ী :: অপরুপ রুপে সাজানো প্রাকৃতিক সুন্দর্যের লীলাভূমি জুড়ীর সীতাকুণ্ড।

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে পাথারিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্টের সমনভাগ বিট ও লাঠিটিলা বিটের প্রান্তে অবস্থিত পর পর দুটি ঝর্না। আগে বহুল প্রচারিত ছিল না। তবে, এখন থেকে প্রতিদিন অনেক পর্যটকের সমাগমস্থল।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আমরা চার সদস্যের টিম প্রথম গিয়েছিলাম সমনভাগ বিটে পরিবেশ সক্রান্ত কাজের জন্য। ফরেস্ট অফিসে যাওয়ার পর ফরেস্ট অফিসারের আত্মীয়তায় চা নাস্তা সেরে স্থানীয় কামাল ভাইকে সাথে নিয়ে সমনভাগ বিট অফিস থেকে কিছু দূরে এগিয়ে যাওয়ার পর ডান দিকে পাহাড়ের উটি কিছুক্ষন পর উপর থেকে শো শো শব্দ শুনি। ধারণা করেছিলাম উপর থেকে পানি পড়ার মতো কিছু।

সাথে ছিল আমাদের গাইড কালাম ভাই, আমি সহ আরো ২ জন গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বশির আহমেদ, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারহাদ আহসান সহ আমাদের ৪ সদস্যের টিম। কামাল ভাইকে বলেছিলাম, ভাই ফিরে যাওয়ার সময় আমাদেরকে ঝর্নাটা একটু দেখাবেন, উনি বললেন আচ্ছা ঠিক আছে।

এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে অনেক উচু পাহাড় ওপরে পৌঁছাতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লেগেছিল। টাইগার নামে একটি যোঁক সেখানে অনেক প্রচুর ক্লান্তি আর কষ্ট নিয়ে উপরে উঠলাম উপরে হৃদয় জুড়ানো দৃশ্য উপভোগে মন ভরে গেল। সাথে বায়নোকুলার ছিল সেটা দিয়ে দেখতে লাগলাম। হঠাৎ দেখা যায় বিলের মতো কিছু, একটু সময় দেখার পর অনুমান করছি হাকালুকি হাওর। মনে হয় হাতের লাগালে কাছে থেকে দেখা যাচ্ছে হাকালুকি হাওর।

বাহ্, কি সুন্দর হৃদয় জুড়ানো দৃশ্য, পাথারিয়ার ময়নাছড়ার মতো আমার দেখা পাথারিয়ার সব চেয়ে মনোমুগ্ধকর জায়গা ছিল।

সেখানে বন্য হাতির ভয়! প্রায় ১ঘন্টা সময় বসে বিশ্রাম নিয়েছিলাম। সাথে কিছু শুকনো খাবার ছিল সামান্য নাস্তা করেছিলাম গাছের নিছে সবাই মিলে।

সমনভাগ বিট ও লাঠিটিলা বিট একদম সংযুক্ত, লাঠিটিলা বিট মাধবকুন্ড বিটের সাথে সংযুক্ত তবে লাঠিটিলার আয়তনে একটু বড়। চোখের সামনে দেখা যায় পাহাড়ের উপর থেকে, বেশ ভাল লেগেছিল সেখানে কিছু সময় থাকার পর সে পাহাড় থেকে ফিরে নিচের দিকে নামতে থাকি একদম নিচে নামার পর হাতের বামদিকে ঝর্নাটি অবস্তিত। মেইন ছড়া থেকে মাত্র ৫০ ফুট ভেতরে ঝর্নাটি অবস্তিত।

কিন্তু, কোন রাস্তা ছিল না! কোন রকম পৌছুতে সক্ষম হয়েছি সেখানে গিয়ে ঝর্নার সাথে দেখার নেশায়। অসম্ভব একটা দৃশ্য উপভোগ করলাম। খুব ঠান্ডা ছিল যায়গাটি অনেক ক্লান্ত ছিলাম। পাহাড় থেকে নেমে, ঝর্নায় গিয়ে প্রান শান্তি হয়েছিল আমাদের।

হঠাৎ, কালাম ভাইকে বশির ভাই বলেছেন…. এই ঝর্নার কোন নাম আছে?

উত্তরে… তিনি বলেছেন না। কোন নাম নেই! তবে আমরা জেরজেরি নামে ডাকি।

তখন বশির ভাই বলেছেন, এই ঝর্নাটি যখন এত শীতল শান্ত পরিবেশ। তাহলে এখন থেকে ঝর্নাটির নাম সীতাকুণ্ড দেওয়া যায় সবার কাছে পরিচিত থাকবে এই নামে। সেখানে যাওয়ার মতো কোন রাস্তা ছিল না, ফরেস্ট সহকারি স্থানীয় বাসিন্দা কামাল ভাই বললেন আচ্ছা, আমি বন বিভাগের সাথে কথা বলে রাস্তা করে দিবো। সেখান থেকেই পরিচয় পাথারিয়ার সীতাকুণ্ডের সাথে।

এর আগে কোন পর্যটক জানতো না এখানে এতো সুন্দর হৃদয় জুড়ানো একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা এখানে আছে।

২০২০ সালে, বর্তমানে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে মনোরম পরিবেশ হিসেবে বেশ পর্যটকের ভীড় জমেছে। সেখানে পরিবার নিয়ে অনেকেই সহজে যেতে পারে কারণ, সেখানে যেতে সহজেই যাওয়া যায় সমতল রাস্তা সংযুক্ত।

কীভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে কুলাউড়া রেলস্টেশনে পৌছাতে হবে সেখান থেকে জুড়ী উপজেলায়, ভাবানীগন্জ বাজার, সেখানে এসে মাইক্রো, CNG অথবা অটোরিকশা নিয়ে সরাসরি জামকান্দি বাজারের প্রবেশ করার একটু আগে, ফরেস্ট অফিস রোডে ঢুকে একদম অফিসে চলে যাবেন। অফিস থেকে ৭ থেকে ৮ মিনিট এগিয়ে গেলে পাওয়া যায় ছোট একটি ঝর্না তার পর ডানদিকে দেখা যায় সীতাকুণ্ড ঝর্না।

লেখক: পরিবেশ কর্মী, জুড়ী, মৌলভীবাজার।

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930