হবিগঞ্জে রুকন হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাজু সহ ১০ জন আসামী ঢাকায় আটক
হবিগঞ্জে রুকন হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাজু সহ ১০ জন আসামী ঢাকায় আটক
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত মে ১৪, ২০২৪
মনির হোসেন জীবন : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে হবিগঞ্জের লাখাই এলাকায় চাঞ্চল্যকর রুকন উদ্দিন হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাজু মিয়াসহ হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ১০ জন আসামিকে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার আনুমানিক সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটের সময় র্যাব-১০ এর একটি দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
আজ বিকেলে র্যাব-১০ এর সহকারী পুলিশ সুপার ও সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এম. জে. সোহেল এসব তথ্য জানান।
হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার স্বজনগ্রামের তাদের সকলের বাড়ি।
র্যাব-১০ এর সহকারী পুলিশ সুপার এম. জে. সোহেল জানান, হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানাধীন স্বজনগ্রাম এলাকায় বসবাসকারী সাজু মিয়া (৫০) তার নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে একটি লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করে। ওই লাঠিয়াল বাহিনী সংঘবদ্ধভাবে লাখাই থানার বিভিন্ন এলাকায় দাঙ্গাবাজি, মারামারি, ভূমি দখল ও প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছিল। তাদের এহেন কার্যকলাপে কেউ বাঁধা প্রদান করলে তারা ওই বাঁধা প্রদানকারীকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করত।
মামলা ও ঘটনার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ তারিখ আনুমানিক সকাল ১০ টার দিকে উল্লেখিত লাঠিয়াল বাহিনীর অন্যতম নেতা সাজু মিয়া (৫০)সহ আরো ৩-৪ জন স্বজনগ্রাম এলাকার একটি রাস্তার পাশ থেকে মাটি কেটে তাদের নিজের জমিতে ভরাট করছিল। তখন একই এলাকায় বসবাসকারী ভিকটিম রুকন উদ্দিন ও তার ভাই আশরাফ উদ্দিন বিষয়টি দেখে সাজুকে বলে যে, এভাবে রাস্তা থেকে মাটি কাটলে রাস্তার ক্ষতি হবে। রুকন উদ্দিনের ওই কথায় সাজু মিয়া ও মফিজ মিয়াসহ ৩-৪ জন ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের হাতে থাকা কোঁদাল নিয়ে রুকন উদ্দিন ও আশরাফ উদ্দিনের উপর আক্রমন করার জন্য উদ্ব্যত হলে তাদের আত্নচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাদের মাঝে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়। পরবর্তীতে সাজু ও মফিজ তাদের লাঠিয়াল বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ভিকটিম রুকনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
সূত্রে জানা যায়, পরবর্তীতে এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ ঘটনার ঘটনার আনুমানিক বিকাল ৪ টার দিকে সাজু, মফিজ ও তাদের লাঠিয়াল বাহিনীর ৩০-৪০ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্র (রাম দা, ফিকল, কুচারশলা, লোহার রড ও লাঠি) নিয়ে রুকন উদ্দিনের বাসায় সামনে দাঁড়িয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। গালিগালাজ করার একপর্যায়ে ভিকটিম রুকন উদ্দিন বাসা থেকে বেরিয়ে আসলে সাজু ও মফিজসহ অপরাপর আসামিরা তাদের কাছে থাকা রাম দা, ফিকল, কুচারশলা, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে রুকন উদ্দিনকে এলোপাথাড়ি আঘাত করে তার চোখ, মাথা, কোমর ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে উল্লাস করতে করতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওই ঘটনার পর রুকনের পরিবারের লোকজন স্থানীয় লোকজনদের সহযোগীতায় রুকনকে গুরুতর রক্তাক্ত আহত অবস্থায় লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্যকপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুকনের অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানকার চিকিৎসক রুকনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতেল রেফার্ড করেন। উক্ত হাসপাতালের চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রুকনের অবস্থা অশংখ্যাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে রুকনকে ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করলে সেখানে আই.সি.ইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৪ সালের ৫ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১ টা ১০ মিনিটের সময় রুকন মৃত্যুবরণ করেন।
এম. জে. সোহেল জানান, ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় মৃত রুকন উদ্দিনের ছেলে আলমগীর মিয়া বাদি হয়ে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানায় সাজু, সাদির ও মফিজসহ ২০ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে পেনাল কোড আইনে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের বিষয়টি জানতে পেরে হত্যাকান্ডে জড়িত সকল আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়।
তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।