বিশেষ সংবাদদাতা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানী উত্তরার রাজপথে
আওয়ামী, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, পুলিশ ও দুর্বৃত্তের গুলিতে শহিদ হন মেধাবী কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহিন । তার আনুমানিক বয়স ১৭ বছর। শহিদ মাহিন রাজধানী পান্থপথ কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড টেকনোলজি (NiET) ২০২৪ সেশনের বিঞ্জান বিভাগের প্রথম বর্ষের অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী ছিল।
উত্তরায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে শতাধিক ছাত্র-জনতা ও পথচারীগুলিবিদ্বসহ আহত হয়েছেন। তার মধ্যে এখনও অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচেছন। তবে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে মাহিনের শহিদি মর্যাদা চান তার পরিবার ও এলাকাবাসী।
জানা গেছে, বর্তমান সরকারের নিকট শহিদ শিক্ষার্থী মাহিনের পরিবার আর্তি, আমরা আর কিছু চাই না, আমার ছেলের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ডিয়াবাড়ী মডেল হাইস্কুলের পাশে খাস জমির উপর একটি মাত্র লাইব্রেরি চাই। যার নাম করন করা হউক “শহিদ আব্দুল্লাহ আল মাহিন” লাইব্রেরী।
জানা গেছে, ঘটনার দিন গত ৪ আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১১ টার দিকে তুরাগের ডিয়াবাড়ীর এলাকার আসাদ মিয়ার ভাড়াটিয়া বাড়ির নিচ তলার বাসা থেকে মিছিলের উদ্দেশ্যে বের হয় মাহিন সহ তার কয়েকজন বন্ধু। কিন্তু তার সহপাঠীরা রাজপথে মিছিল করে একেএকে যে যার মত নিজ নিজ বাসায় রাতে ফিরলেও মাহিন বাসায় ফিরেছে লাশ হয়ে । বাসা থেকে আসার সময় দূরসম্পর্ক্য নানু আলমঙ্গীরকে মাহিন বলেছিল ” নানা, তুমি মিছিলে এসো, আমি একটু আগে যাই”। আর আসার আগে মাকে বলে আসছিল, আম্মুু আমি মিছিলে যাই। তুমি কোন চিন্তা কর না, প্রতিদিনের মত বন্ধুদের সাথে যাব আর আসব। এটাই ছিল তার জীবনের শেষ কথা।
তুরাগের ডিয়া বাড়ি ভাড়াটে বাসায় সরেজমিন পরিদর্শন ও নিহত শহিদের পরিবারের সাথে আলাপ করে জানা গেল সেই দিনের ঘটনা, ২০২৪ সালে তুরাগের ডিয়াবাড়ি মডেল হাইস্কুল বিঞ্জান বিভাগ থেকে (চলতি বছর) সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে এ গ্রেড পেয়ে কৃতিত্বের সাথে পাস করেছেন
আব্দুল্লাহ আল মাহিন । ছাত্রদের কোটা আন্দোলন- চলাকালে মাহিন ঘটনার দিন গত ৪ আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১১ টার তার স্কুল ও কলেজ বন্ধুদের সাথে উত্তরায় কোটা আন্দোলন চলাকালে উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সে এর সামনে ওভারব্রীজ এর পাশে রাজপথে সম্মুখ যুদ্বে নেমে পড়েন। তখন চার দিকে শুধু
মুহু গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
এরপর তার বামচোখে ও ঘাঁড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক দিন একাধিক হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়ে অবশেষে মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়েন মাহিন । তার আশা ছিল ভবিষ্যৎতে কম্পিউটার ইঞ্জিয়ার হওয়া। তার সেই আশা পূরণ হবার আগেই দুনিয়া থেকে চিরদিনের মত না ফেরার দেশে চলে যেতে হয়েছে তাকে । শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহিনের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার ও সহপাঠীরা। ইতিমধ্যে শহিদ মাহিনের জন্য নিহতের পরিবার ও ডিয়াবাড়ি মডেল হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তার বিদ্রোহী আত্নার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়াও মোনাজাত করা হয়। সেই দিনের বীরত্বগাঁথা বিশেষ প্রতিবেদনটি লিখেছেন আমাদের বিশেষ সংবাদদাতা।
তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, ময়মনসিংহ জেলার কোতয়ালী (সদর থানা) ৬৩/ বি পুরহীত পাড়া ময়মনসিংহের বাসিন্দা এবং প্রবাসী মো: জামিল হোসেন সোহেল ও সামিরা জাহান মণি’র এক মাত্র আদরের পুত্র হল আব্দুল্লাহ আল মাহিন । বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) রোড নং ২/ এ, হোল্ডিং নং- ৬, সাবেক ৫ নং ওয়ার্ড সাবেক হরিরামপুর ইউনিয়ন ডিয়াবাড়ী তুরাগ থানা তুরাগ এলাকায় সপরিবারে বসবাস করে আসছিল তারা।
ঘটনার বিবরণ জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট, ২০২৪ ইং তারিখে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে যখন ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল। ঠিক তখন আব্দুল্লাহ আল মাহিন তার স্কুল- কলেজ বন্ধুদের সাথে প্রতিদিন মিছিলে অংশ নিতো। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানার আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের উত্তর পাশে ওভারব্রিজ সংলগ্ন আওলামীগের প্রভাবশালী কতিপয় নেতার নির্দেশে মিছিলকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্যকরে গুলি ছুড়া হয়। এসময় শিক্ষার্থী ও মিছিলকারী (উভয় পক্ষের মধ্যে) দফায় দফায় চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। চলে মুহুমুহু গুলি, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘটনার দিন উত্তরার আজমপুর, রাজলক্ষ্মী মার্কেট, রাজউক মার্কেট, বিএনএস সেন্টার, আমির কমিরকমপ্লেস, জমজম টাওয়ার, নর্থ টাওয়ার, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, আব্দুল্লাহপুর ও জসিম উদ্দিন রোড এলাকায় পুলিশের সাথে সাদা পোষাকের কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। বেশ কিছু ককটেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেট ও বিস্ফোরিত হয়। আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক-সেদিক ছুটোছুটি শুরু করে। পরে তারা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এভাবে অনেক্ষণ চলতে থাকে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের অনেকে অলিগলিতে ঢুকে পড়লে সেখানেও খুঁজে বের করে হামলা করা হয়।
সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষ চলাকালে কোন এক মুহুত্বে দুর্বৃত্তদের ছুড়া একটি গুলি এসে শিক্ষার্থী মাহিনের বাম চোখে এসে লাগলে সে আহত হয়ে মাটিতে বসে পড়ে। পরের গুলিটি তার নাক বরাবর পিছন থেকে এসে এসে নাকের ভেতরের হাড়ে আটকে যায়। এরপর তাকে উদ্বার করে প্রথমে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর আগারগাঁরস্হ নিউরোলজিস্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত সাড়ে ৯ টার পর চিকিসৎক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। ঘটনার সময় তার পরনে ছিল কালো ও লাল রঙয়ের হাফ হাতা গেঞ্জি (জার্সি) ও খাকি রঙয়ের ফুল প্যন্ট। তাঁর পিতা একজন প্রবাসি এবং মাতা রাবেয়া খাতুন একজন গৃহিণী। মাহিনের পিতা প্রায় একযুগ প্রবাসে কাটিয়েছেন। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে মাহিনের মা ও বাবা তারা দু’জনই পাগল প্রায়। ইতিমধ্যে পুত্রে শোকে তারা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সন্তানের শোকে মা বারবার মূর্ছা যাচেছন। আর জায় নামাজে বসে নামাজ পড়ে এক মাত্র পুত্রের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট দু’ হাত তুলে দোয়া করছেন। গতকাল বাদ মাগরিব তার বাসায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এতে অংশ নেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন পরে এক দফা দাবিতে পরিণত হয়। যার ফলশ্রুতিতে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অপতিরোধ্য আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিহতের পিতা ও তার আত্নীয় স্বজনরা এই প্রতিবেদকে জানান, ঘটনার দিন দিবাগত রাত ১ টার দিকে তুরাগ থানার ডিয়াবাড়ী বিআরটি উত্তরা অফিসের সামনে মাঠে নিহত কলেজ শিক্ষার্থী মাহিনের প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্টিত হয়। এরপর একই রাতে তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার কোতয়ালী থানার (পুরহীত পাড়া) ইসলাম মাদ্রাসা মাঠে দ্বিতীয় জানাযা শেষে ভাটিকাস্মর কবরস্থানে দাদি রাবেয়া খাতুন রওশনারা কবরে তাকে দাফন করা হয়।
এবিষয়ে জানতে ডিয়াবাড়ী মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা শেখ এই প্রতিবেদকে জানান, প্লে থেকে ১০ শ্রেনী পর্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে মাহিন আমার স্কুলে পড়াশোনা করেছে। একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে সবার কাছে মাহিনের গ্রহন যোগ্যতা ছিল, তেমনি তার ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বন্ধু মহলেও ছিল গ্রহণযোগ্যতা । খুব অল্প সময়ের মধ্যে একজন মানুষের সাথে মাহিন মিশে যেতে পারতেন। তার সুন্দর আচার আচরন ও ব্যবহার মানুষকে আকৃষ্ট করত। শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ে চমক খেলাঘর আসরের একটি শাখা রয়েছে। সে ওই সংগঠনের সদস্য ছিল। আমি তার জন্য দোয়া করি এবং বিদ্রেহী আত্নার মাগফিরাত কামনা করি।
এবিষয়ে মামলা করবেন কি না প্রশ্ন কিংবা জানতে চাইলে মাহিনের পিতা মো: জামিল হোসেন সোহেল
এই প্রতিবেদকে জানান, পরিবার ও আত্নীয় স্বজনদের সাথে আলাপ আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মাহিনের সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর হাজারো মানুষ চোখের পানি ফেলেছেন।
৪ আগস্ট কী ঘটেছিল উত্তরায় শহিদ আব্দুল্লাহ আল মাহিনের সঙ্গে? এই প্রসঙ্গে শহিদ মাহিনের পিতা মো: জামিল হোসেন দুর্বৃত্ত ও অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার চেয়ে বলেন, আমি আমার ছেলের খুনিদের সুষ্ট বিচার চাই। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ট তদন্ত চাই।
একই সাথে অপরাধীদের বিচার চাই। আমার সন্তানের হত্যাকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমার ছেলের কোন দোষ ছিল না। বিনা কারণে তাকে খুন করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গ ডিয়াবাড়ি মডেল হাইস্কুলের প্রতিষ্টাতা ও খেলাঘর ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এডভোকেট আরিফুল ইসলাম এই প্রতিবেদকে জানান, খেলাঘর সংগঠক হিসেবে আমি লক্ষ্য করছি, ছোট বয়স থেকে খেলাঘরের সাথে সম্পৃক্ত ছিল শহিদ মাহিন। সে প্রতিটি অনুষ্টানে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশ গ্রহন করত। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে খেলাঘর কর্মীরা যে ভাবে শহিদ হয়েছিল ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (কোটা আন্দোলন) চলাকালে আমার স্কুলের ছাত্র ও খেলাঘর সদস্য মাহিন বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ছাত্রদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে এসে শহিদ হয়েছে। আমি শহিদ মাহিন সহ দেশের সকল শিশু হত্যার ন্যায় বিচার চাই।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক হয়রানীমুলক মামলার কালচার বন্ধ করে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় নিয়ে এনে শাস্তি প্রদানের দাবি করছি। আমরা তাকে কোন দিন ভুলবো না। ভুলতে পারি না।
শহিদ মাহিনের চাচা সুরুজ্জামান এই প্রতিবেদকে
বলেন, ছোট বেলা থেকে আমার চোখের সামনে বড় হয়েছে মাহিন। ছেলে হিসেবে মাহিন অত্যন্ত ভদ্র ছিল। অন্যের পিপদে সে ঝাপিয়ে পড়তো। তুরাগের ডিয়াবাড়ী এলাকায় একমাত্র মাহিন ছাড়া আর কেউ শহিদ হয়নি। তবে, বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচেছন।
মাহিনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মাহিনকে তো আমরা আর ফিরে পাব না, সে আর ফিরে আসবে না। তার ঋণ আমরা শোধ করতে পারবো না। কিন্তু ছোট এই মাহিনের স্মৃতি ধরে রাখতে মাহিনের নামে কিছু একটা স্মৃতি ধরে রাখতে চাই। তার নামে তুরাগের ডিয়াবাড়ী এলাকায় প্রয়াত আব্দুল্লাহ আল মাহিন ওরফে শহিদ মাহিন স্মৃতি পাঠাগার তৈরি করার জোরদাবি জানাচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১২ আগস্ট, ২০২৪, সকালে ডিয়াবাড়ি মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে শহিদ শিক্ষার্থী মাহিনের সহপাঠীরা ও বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। এছাড়া ১৮ আগস্ট,২৪ মাহিনের তুরাগের ডিয়াবাড়ী ভাড়াবাড়িতে মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়াও মোনাজাত করা হয়।
মাহিনের বন্ধু সজীব ও শিক্ষকরা এই প্রতিবেদকে
জানান, মাহিন ছিল অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। পড়াশোনা, খেলাধুলা থেকে শুরু করে সকল কাজে সে ছিল বেশ পারদর্শী। ক্রীড়াঙ্গণে বিশেষ অবদানের জন্য প্রাইমারি ও উচচ বিদ্যালয় থেকে বেশ কিছু ম্যাডেল ও ট্রফি অর্জন করেছেন। এগুলো এখন শুধু বাসায় স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণে আছে। অল্পতেই সে সব কিছু বুঝতে পারতো। কম্পিউটার ইঞ্জিয়ার প্রতি তার প্রচুর নেশা ছিল। এসএসসি পাস করে কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড টেকনোলজি (NiET) ২০২৪ সেশনে পান্থপথ শাখায় ভর্তি হন।
মৃত্যুর আগে মাহিন তার নানা আলমগিরকে বলেছিল, তুমি আমার সামনে দাঁড়াও তো দেখি কে কত বড় লম্বা হইছে। তখন জবাবে নানা বলে, “তুই তো দেখি আমার চেছে বেশি লম্বা হয়ে গেছিস। এখন তো তুকে বিয়ে করাব”। আজকের মিছিলে নানা তুমি আমার সাথে যাবে না, তুই আগে যা, আমি তো বয়স হয়েছে। আমি একটু পর আসছি, আমি তোর পিছনে থাকবো।
মাহিনের স্কুল শিক্ষক আব্দুল হান্নান এই প্রতিবেদকে
জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ আব্দুল্লাহ আল মাহিন (১৬) আমার ছাত্র ছিল। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। সে ছিল খেলাধুলায় বেশ পারদর্শী। কম্পিউটারের প্রতি তার প্রচুর নেশা ছিল। কম্পিউটার তার কথা বুঝবে আর সে বুঝবে কম্পিউটারের ভাষা। সে এক দিন বড় ইঞ্জিয়ার হবে এটা ছিল তার স্বপ্ন। তার সেই স্বপ্ন আর পুরন হলো না। এর আগেই তাকে না ফেরার দেশে চলে যেতে হল। সে আর কখনও আমাদের মাঝে ফিরে আসবে না।
মাহিনের পিতা জামিল হোসেন সোহেল কান্না জনিত কন্ঠে এই প্রতিবেদকে জানান, আমার ছেলেকে আপনারা আমার কাছে ফেরত এনে দেন। আমি কি নিয়ে বাঁচবো। আমি আর কোন কিছু চাই না। আমার একমাত্র বুকের ধন মাহিনকে ছাড়া বাঁচবো না। আমি ২০১২ সালে প্রথমে লিবিয়াতে চাকরি করতে যাই। এরপর ২০২০ সালের ৬ মার্চ ৭ মাসের ছুটিতে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে আসি। এরআগে ১৯৯৬ সালে সিঙ্গাপুরে যাই এবং ২০০৪ সালে দেশে আসি। আমি দীর্য দিন প্রবাসে কাটিয়েছি।
মাহিনের মাতা সামিরা জাহান মণি এই প্রতিবেদকে
জানান, আমার ছেলে পোলাও, মুরগীর রোস্ট, চিফস, ইলিশ মাছ, চিংচি মাছ, মাঙ্কাস মাস খেতে বেশি পছন্দ করতো। পাশাপাশি গান করতো, ছোট খাট নাটক করতো, গিটার বাজাত ও খেলাধুলা পছন্দ করতো।
মামলা করবেন কি না জানতে চাইলে মাহিনের পিতা ও মাতা জানান, আমরা মামলা করতে উত্তরা পশ্চিম থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ আমাদের মামলা নেয়নি। এখন আমি আবারও আইনের আশ্রয় নিবো। মামলা দায়ের করবো।
ময়মনসিংহ জেলার দোবাউড়া থানার বালিগাঁও গ্রামের মাহিনের নানার বাড়ি (সামিরা জাহান মণির বাড়ি) । মাহিনের গ্রামের বাড়িতে ও দোয়া ও মিলাত মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মাহিনের পরিবার জানান, আমার ছেলেকে গুলি করে মারা হয়েছে। আমি এর সুষ্ট তদন্ত ও ন্যায় বিচার চাই। তুরাগ থানার ডিয়াবাড়ী গ্রামের আসাদ মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া হল জামিল হোসেন সোহেল। প্রায় ৪ বছর ধরে এই বাসায় বসবাস করছেন। আমার স্বামী একজন প্রবাসি। সে প্রায় একযুগেরও বেশি সময় প্রবাসে কাটিয়েছে।
স্বপ্ন পুরণ হলো না তার কলেজ ছাত্র মাহির । পরিবারের একমাত্র আদরের সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা তার পরিবার। এখনও তার পরিবারে চলেছে শোকের মাতম।
স্বপ্ন ছিলো পড়ালেখা করে অনেক বড় হবে। চাকরি করে দুঃখ ঘোচাবে। কিন্তু ৫ আগস্ট সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে ঘাতকের নির্মম বুলেটে স্বপ্ন ভেস্তে গেলো ১৭ বছরের কলেজ শিক্ষার্থী (কিশোর) মাহিনের।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই প্রতিবেদকে জানান, মাহিন খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। শুধু লেখাপড়া নয়, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সে ছিল পারদর্শী। আমাদের প্রত্যাশা ছিল লেখাপড়া শেষে সে বড় কিছু হবে। কিন্তু এর আগেই তাকে সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হল। তবে, তার স্মৃতিকে ধরে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এলাকাবাসীরা এই প্রতিবেদকে জানান, ওয়াসিমের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শহিদ বিনয়ী হওয়ার কারণে সবাই তাকে পছন্দ করতেন। তিনিও সবার সাথে আন্তরিকভাবে মিশতেন। মাহিনের পরিবারকে সরকার সর্বোতভাবে সাহায্য করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন স্থানীয়রা। মেধাবী মাহিনের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানান তার প্রবাসী পিতা মো: জামিল হোসেন সোহেল, তার পরিবার এবং এলাকাবাসীরা।
কোটা আন্দোলনে শহিদ কলেজ শিক্ষার্থী
আব্দুল্লাহ আল মাহিনের নামে ডিয়া বাড়ী এলাকায় একটি পাঠাগার গড়ে তোলার জন্য সরকার প্রধানের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন শহীদ পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি।