• ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

লিফলেট মার্কা পত্রিকা, অখাদ্য সম্পাদক,টাউট, বাটপার, দালাল আর সাংবাদিক এক জিনিস নয়

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪
লিফলেট মার্কা পত্রিকা, অখাদ্য সম্পাদক,টাউট, বাটপার, দালাল আর সাংবাদিক এক জিনিস নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক :

কারোর নিজস্ব কোন যোগ্যতা থাকলে, দক্ষতা থাকলে সে কোন দিনই কারোর তোষামোদ কিংবা লেজুড়বৃত্তি করবে না। এটাই স্বকীয়তা। আপনি লিখতে জানলে, অনুসন্ধানী যোগ্যতা থাকলে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতায় আপনার কদর সর্বত্রই থাকবে।

আপনি যথেচ্ছা সংবাদ লিখবেন, ছাপাবেন, পত্রিকা বের করবেন, আবার ইচ্ছে হলো না বলে নিউজ গায়েব করে দিবেন- এমন স্বেচ্ছাচারিতার অধিকার কে দিল আপনাকে? সংবাদের আইডিয়া, বিষয়বস্তু নির্ধারণ, লেখনী, প্রকাশের সকল ধাপেই যৌক্তিকতা থাকতে হবে। কেনো লিখবো, কেনো লিখবো না তার ব্যাখ্যা থাকা জরুরি। অন্তত নিজের কাছে হলেও এ প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব থাকতে হবে। রাষ্ট্র ও জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট দায়বদ্ধতা নিয়ে সর্বোত্তম বিবেকবানদের পত্রিকা প্রকাশনায় পা ফেলতে হয় – তবেই তা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের মর্যাদা পায়।
কিন্তু আপনার কাছে পত্রিকা প্রকাশ করা কেবলই যদি ব্যবসা হয়ে থাকে, সাংবাদিকতা মানেই যদি হয় দালালি আর বাণিজ্য – তাহলে জেনে রাখুন আপনিই অপসাংবাদিকতার গডফাদার। আপনার পত্রিকা সাংবাদিক নামধারী টাউট, বাটপার আর ঘৃণ্য দালাল তৈরির কারখানা। আপনারাই লুটেরা বেনিয়াদের মত সাংবাদিকতাকে যথেচ্ছা ধর্ষণ করে চলছেন।

টাকা সবার দরকার তাই বলে ব্যক্তিত্ব বিলিয়ে দিয়ে নয়। পত্রিকা বাঁচাতে বিজ্ঞাপন দরকার আছে তাই বলে সাংবাদিকতাকে বিসর্জন দিয়ে নয়, সাংবাদিকতার কাঠামো ধ্বংস করে নয়। কিছু সংখ্যক পত্রিকাই বের হয়েছে যেন বিজ্ঞাপনের ব্যবসা করতে। পতিতা পল্লীর দালালদের মত তারা বিজ্ঞাপন নিয়ে এমনই কামড়া কামড়ি করে তা দেখলে লজ্জা পেতে হয়। ওই পত্রিকাগুলো মফস্বলে শুধু বিজ্ঞাপন ভিক্ষা করতেই সাংবাদিক নিয়োগ করে। তারা জানেই না যে, পত্রিকা বানানো হয় জনস্বার্থে- ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য নয়। ভিক্ষা করে যে ব্যবসা চালাতে হয় সেই ব্যবসা খুলে বসতে কে বলেছে আপনাকে? আসলে পত্রিকাকে পুঁজি করে পেছনে আছে আঁধারের বাণিজ্য, তদবির, অপরাধ, ঠিকাদারি! তা না হলে সিনেমা হল ব্যবসায়ী, ক্লিনিক বাণিজ্যের হোতা, চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, নির্মাণ ঠিকাদার, মুদি দোকানিরাও দলে দলে পত্রিকা ব্যবসা খুলে বসবে কেনো?

সাংবাদিক মানে বিজ্ঞাপন সংগ্রাহক নন, তিনি সংবাদ সংগ্রাহক, প্রস্তুতকারক, সম্পাদনাকারী। কিন্তু আপনি সংবাদ সংগ্রহ করেন না, লিখেন না- শুধু বিজ্ঞাপনের জন্য দিন রাত ছুটে বেড়ান। এ ধরনের “বিজ্ঞাপনী সাংবাদিকতার” সুযোগ নেই। আপনি পদ পরিবর্তন করে স্বেচ্ছায় বাণিজ্যিক প্রতিনিধি বা কমার্শিয়াল এক্সিকিউটিভ হয়ে যান। কেউ আপনাকে লজ্জা দিবে না, সাংবাদিকতার দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না। জেলা উপজেলার প্রতিনিধি হয়েই ইজারাদার হয়ে উঠেন অনেকে। ভাবেন তার খেয়াঘাটে আর কেউ নৌকা ভেড়াতে পারবে না। এই ইজারাদারির সাংবাদিকতা কোথায় পেলেন?

নিজের এলাকায় বড় বড় ঘটনা ঘটছে সেগুলোর কিছুই জানেন না, নিউজও পাঠান না, তারপরেও নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন- এতে লজ্জাও হয় না? অখাদ্য নির্লজ্জতা এভাবে সাংবাদিকতা দখল করেছে বলেই আজ সাংবাদিকতার এত দুর্দশা ঘটছে।
পা খোঁড়া, পঙ্গু মানুষের দৌড় প্রতিযোগিতা কিংবা ফুটবল খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। তেমনি চোখে দেখেন না, কানে শোনেন না, চলতে পারেন না টাইপের প্রতিবন্ধীদের জন্য মাঠ সাংবাদিকতা নয়। কোনো নিউজের ব্যাপারে যার উৎসাহ নেই, এলাকা, সমাজ, জনগোষ্ঠী, রাষ্ট্রের প্রতি যার দায়বোধ নেই- সবকিছুতেই দায়সারা গোছের মানুষ হিসেবে অন্য দামী পেশাকে বেছে নিন। অন্য কিছু করার যোগ্যতা নেই অগত্যা আটকে থাকার পেশা সাংবাদিকতা নয়।

একইভাবে অশিক্ষিত, আধা শিক্ষিত আর রাজনৈতিক দলের সক্রিয় নেতা কর্মী, অন্ধ সমর্থকদের জন্য সাংবাদিকতা নয়। হ্যা, রাজনৈতিক দল করেও সাংবাদিকতা করতে পারবেন, তবে সংবাদ লেখার সময় আপনাকে দলীয় মতামতের উর্ধ্বে উঠে জনগণের পক্ষে, স্বচ্ছ নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কিন্তু আপনার এমন স্বচ্ছতার গ্যারান্টি কি?

সাংবাদিকতা হচ্ছে সবচেয়ে সচেতন, বিচক্ষণ, মেধাবী মানুষের পেশা। সকল ক্ষেত্রেই তার গঠনমূলক চিন্তা চেতনা থাকতে হবে। কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই, কিন্তু সব বিষয়ে মার্জিন ধারণা থাকা আবশ্যক। তাকে সবজান্তা হতে হবে না। এ কারণে একজন সাংবাদিক প্রতিদিনই কমবেশি ভুল করতে পারেন। তাই বলে এক ভুল দ্বিতীয়বার করার কোনো সুযোগ নেই তার।

আপনার কর্মস্থল যদি হয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন কিংবা টিভি চ্যানেল- তাহলে সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা দ্বিতীয়বার আশা করা অন্যায়। এসব প্রতিষ্ঠানে সবকিছুই করতে হয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, তাই তাগিদ দেয়ার উপায় নেই। অতএব একবারের নির্দেশনায় যথা সময়ে কাজটি সম্পন্ন না করা মানেই হলো আপনি ব্যর্থ।

দায়িত্বশীলদের কথা শুনুন গুরুত্বের সঙ্গে, মনোযোগ সহকারে। আংশিক শুনেছেন, বুঝতে পারেননি কিংবা খেয়াল করেননি- সাংবাদিকতায় তা চলে না। জ্ঞ্যান বিতরণের পরিবর্তে কাজটি নিজে করে দেখানোর নাম হচ্ছে দায়িত্ব। আর সাংবাদিকতায় এই দায়িত্ব’র দাম সবচেয়ে বেশি।

এখন রিপোর্টার হওয়ার আগেই এডিটর হতে চান, আবার নিজেই নিজের নিউজকে যুৎসই কাভারেজ দিতে মেকআপম্যান হয়ে যান মুহূর্তেই। এগুলো ছাড়ুন, এটা পেশাদারিত্ব নয়। অনেকেই আবার পেশাদারিত্ব বলতে কেবলই বেতন ভাতা, সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি বলে ভাবেন। অথচ পেশাদারিত্ব যে দায়িত্ববোধ, নির্দিষ্ট কর্তব্য কাজের অঙ্গীকার, সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার শপথ সেগুলো বেমালুম ভুলে যান।

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930