• ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১২ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী তামিম হত্যাকান্ডের মূলআসামী হাসানসহ আটক-২ : অপহরণের পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত জুলাই ১৩, ২০২৪
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী তামিম হত্যাকান্ডের মূলআসামী হাসানসহ আটক-২ : অপহরণের পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

এস, এম, মনির হোসেন জীবন : গাজীপুরের কোনাবাড়ীর আমবাগ এলাকা থেকে আইনুদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার সাড়ে ৬ বছরের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ, অপহরণের পর তার পরিবারের নিকট ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি এবং ঘটনার ৪ দিন পর বাড়ির পাশে কলাবাগান থেকে শিশু তামিমের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যা মামলার মূল আসামী হাসান ও নিহত ভিকটিমের চাচাতো ভাই সাগর সহ ২ জনকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

র‍্যাব সূত্র জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-১৪ এর পৃথক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার কদুরবাড়ী বাজার এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী মোঃ হাসান মিয়া (২০) ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ভিকটিমের চাচাতো ভাই মোঃ সাগর মিয়া (২২)।

আটক আসামীরা হলো, হত্যা মামলার মূলহোতা ও প্রধান আসামী ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার পাউরিতলা গ্রামের মৃত মজনু মিয়ার পুত্র
মোঃ হাসান মিয়া (২০) ও ফুলপুর থানার কদুরবাড়ী বাজার কুশকান্দা গ্রামের ইস্কান্সার মিয়ার পুত্র মোঃ সাগর মিয়া (২২)।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় র‍্যাব-১, উত্তরার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লে. কর্ণেল মোস্তাক আহমেদ এসব তথ্য জানান।

এসময় র‍্যাব- ১ এর মেজর জুনুরাইন বিন আলম ও সহকারী পুলিশ সুপার ও সহকারী পরিচালক (অপস্ এন্ড মিডিয়া অফিসার) মোঃ মাহফুজুর রহমান ও নিহত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী তামিমের পিতা- মাতাসহ অন্যান্য র‍্যাব কর্মকর্তা উপস্হিত ছিলেন।

ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে লে. কর্ণেল মোস্তাক আহমেদ জানান, ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম (বয়স সাড়ে ৬ বছর) গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার আমবাগ আইনুদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতো। প্রতিদিনের মতো গত ৭ জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা আনুমানিক ৬ টার সময় ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম বাসায় ফিরে
না আসায় ভিকটিমের পিতা মোঃ নাজমুল হোসেন (৩০) ও তার পরিবারের লোকজন আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে জিএমপি কোনাবাড়ী থানায় ঘটনার দিন একটি নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেন। যার জিডি নং-৩৩২।

র‍্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার জানান, পরবর্তীতে গত ৮ জুলাই, ২০২৪ তারিখ সকালে ভিকটিমের পিতার মোবাইলে অজ্ঞাতনামা একজন বিবাদী ফোন করে জানায় যে, ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম তাদের হেফাজতে আছে, তাদেরকে ১০ লক্ষ টাকা নগদ প্রদান করলে তারা ভিকটিমকে ছেড়ে দিবে। ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন অজ্ঞাতনামা বিবাদীদেরকে টাকা দেওয়ার জন্য গত ৮ জুলাই তারিখ ২০২৪ তারিখে ময়মনসিংহ বাইপাস এলাকায় গেলেও বিবাদীরা তাদের সাথে দেখা করে না। পরবর্তীতে ১০ জুলাই, ২০২৪ তারিখ দুপুর আনুমানিক ১২ টা ২০ মিনিটের সময় গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার আমবাগ মধ্যপাড়া এলাকার একই বাড়ির পূর্ব পাশে কলাবাগানের ভিতর একটি শিশুর পঁচা গন্ধযুক্ত মৃতদেহ পড়ে আছে দেখে আশেপাশের লোকজন থানায় খবর
দেয়। খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ভিকটিমের পিতা ও কোনাবাড়ী থানা পুলিশসহ ওই ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ সনাক্ত করে। এঘটনায় ভিকটিমের পিতা মোঃ নাজমুল হোসেন (৩০) বাদী হয়ে গত ১০ জুলাই, ২৪ তারিখ গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (পেনাল কোড) একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৭।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, গতকাল শুক্রবার (১২ জুলাই) ২০২৪ তারিখ
দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে র‍্যাব-১ এর একটি চৌকস দল র‍্যাব সদর দপ্তরের ইন্ট উইং এর সহযোগিতায় জানতে পারে, ওই
ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামী মোঃ হাসান মিয়া ২০ ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার কৃশকান্দা এলাকায় আত্মগোপনে আছে।

তিনি আরো জানান, এমন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-১ ও র‍্যাব-১৪ ময়মনসিংহ এর পৃথক দল বিকেল সোয়া ৫ টা ও সাড়ে ৭ টার দিকে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার কদুরবাড়ী বাজার এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামী মোঃ হাসান মিয়া (২০) ও তার সহযোগী মোঃ সাগর মিয়া (২২) কে আটক করতে সক্ষম হয়।

আটক আসামীরা র‍্যাবকে জানান, তারা ভিকটিমের পিতা মোঃ নাজমুল হোসেন (৩০) প্লাস্টিকের ববিন কাটার গোডাউনে চাকুরী করতো। তারা ঋণগ্রস্থ ছিল বিধায় মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আটককৃত আসামীরা ভিকটিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনার জের ধরে গত ৭ জুলাই ২০২৪ তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক ৬ টার সময় আসামী মোঃ হাসান মিয়া ও অপর সহযোগী ভিকটিমের চাচাত ভাই আসামী মোঃ সাগর মিয়া (২২), ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম’কে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার আমবাগ মধ্যপাড়া এলাকার বাদীর প্লাষ্টিকের ববিন কাটার গোডাউনের সামনে থেকে ফুসলিয়ে হাতি দেখানোর কথা বলে তামিমকে হাসান এর ভাড়াকৃত বাসায় নিয়ে যায় এবং বাথরুমের ভিতর দঁড়ি দিয়ে হাত ও পা বেধে
মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে আটক করে রাখে এবং মুক্তিপণের বিষয় নিয়ে উভয়ের মধ্যে সলাপরামর্শ হয়। সলাপরামর্শের একপর্যায়ে
ভিকটিম আসামীদের পূর্ব পরিচিত হওয়ায় মুক্তিপণ পেলেও ভিকটিম তার পিতাকে ওই ঘটনা জানিয়ে দেয়ার ভয় থেকে একই তারিখ
আনুমানিক রাত ৮ টার দিকে বাথরুমের ভিতর আসামী সাগর ভিকটিমের পা চেপে ধরে এবং অপর আসামী হাসান ভিকটিমের গলা চেপে
ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে। মৃত্যুর পর মরদেহ (লাশ)কে গাজীপুর কোনাবাড়ী থানার আমবাগ মধ্যপাড়া এলাকার জনৈক জাহের আলীর বাড়ির পূর্বপাশে কলাবাগানের ভিতরে ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ১০ টা ৫৫ মিনিটের সময় রাতের আধারে লাশ গুম করে এবং ৮ জুলাই, ২০২৪ তারিখ ভিকটিমের পিতার কাছে আসামী হাসান ফোন করিয়া জানায় ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম তাদের হেফাজতে আছে। তাদেরকে ১০ লাখ টাকা নগদ প্রদান করিলে তারা তামিমের পিতার কাছে তামিমকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরবর্তীতে ভিকটিমের লোকজন টাকা দেওয়ার জন্য পুলিশের সহায়তায় ঘটনার এক দিন পর গত ৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে আসামীদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী ময়মনসিংহ বাইপাস
এলাকায় যায়। কিন্তু আসামীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের সাথে সাক্ষাৎ না করে সুকৌশলে পালিয়ে যায় বলে স্বীকার করেছেন।

ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম (৬)। গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার আমবাগ আইনুদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতো এবং মোঃ নাজমুল হোসেন (৩০) এর এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ভিকটিম তাদের পরিবারের বড় সন্তান ছিল। ভিকটিমের পিতা তার পরিবার নিয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ এলাকায় বসবাস করতেন এবং প্লাস্টিকের ববিন কাটার ব্যবসা করতেন।

হত্যাকান্ডের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে র‍্যাব জানান, গত ৭ জুলাই ২০২৪ তারিখ বিকাল আনুমানিক ৫ টা ৫০ মিনিটের সময় ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম (৬)’কে তারই পিতার প্লাষ্টিকের ববিন কাটার গোডাউনের সামনে থেকে ফুসলিয়ে হাতি দেখানোর কথা বলে আসামীদের ভাড়াকৃত বাসায় নিয়ে যায়। ভিকটিমকে বাথরুমের ভিতর দড়ি দিয়ে হাত ও পা বেধে মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে আটক করে রাখে এবং মুক্তিপণের বিষয় নিয়ে উভয় তাদের মধ্যে সলাপরামর্শ হয়। একপর্যায়ে ভিকটিম তাদের পূর্ব পরিচিত হওয়ায় মুক্তিপণ পেলেও ভিকটিম তার পিতাকে ওই ঘটনা জানিয়ে দেয়ার ভয় থেকেই একই তারিখ রাত আনুমানিক ৮ টা ৫ মিনিটের সময় বাথরুমের ভিতর আসামী ভিকটিমের চাচাতো ভাই মোঃ সাগর মিয়া (২২) ভিকটিমের পা চেপে ধরে এবং অপর আসামী মোঃ হাসান মিয়া (২০) ভিকটিমের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক আসামীরা
র‌্যাবকে জানান, ভিকটিম সানজিদুল ইসলাম তামিম (৬)’কে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং এই চাঞ্চল্যকর হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেয়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে লে. কর্ণেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, আসামী দুইজন ভিকটিমের পিতা মোঃ নাজমুল হোসেন (৩০) এর প্লাস্টিকের ববিন কাটার গোডাউনে চাকুরী করতো। তারা ঋণগ্রস্থ ছিল বিধায় মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ভিকটিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা দুই জন এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে অকপটে স্বীকার করেছে। ইতিপূর্বে তাদের (আসামীদের) নামে কোন মামলা নেই। তবে, খুনের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচেছ।

তাদেরকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031