বাড্ডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ মোবাইল সিম ও ভিওআইপি সরঞ্জামাদিসহ এক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
বাড্ডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ মোবাইল সিম ও ভিওআইপি সরঞ্জামাদিসহ এক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত জুলাই ১০, ২০২৪
এস, এম, মনির হোসেন জীবন। : রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মোবাইল সিম ও ভিওআইপি সরঞ্জামাদিসহ একজন ভিওআইপি ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বুধবার দিবাগত রাত আনুৃমানিক ৯ টার দিকে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১), এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)র যৌথ একটি দল রাজধানী ঢাকার বাড্ডা থানা এলাকায় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।
আটক ব্যবসায়ীর নাম মোঃ রাজু (৩৬)। লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার মোঃ ইউনুস আলী ভূঁইয়ার পুত্র। বর্তমানে রাজধানীর বাড্ডা থানার মধ্য বাড্ডা বাসা নং- খ-২০২/বি, হাজী সলিমুদ্দিন লেন ঢাকা।
আজ বুধবার রাত সোয়া ১০ টার দিকে র্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার ও সহকারী পরিচালক (অপস্ এবং মিডিয়া অফিসার) মোঃ মাহফুজুর রহমান এই প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, এসময় তার নিকট থেকে ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহৃত, ৩০টি ভিওআইপি সীম বক্স, ৫,০৫০ টি সীম, ২ টি পাওয়ার ক্যাবল, ১টি রাউটার, ১ টি মাউস, ৬ টি পেনড্রাইভ, ৬ টি মোবাইল ফোন, ৫টি ল্যাপটপ, ১টি অনু, ৫টি ইন্টার সুইচ বক্স, ১টি কী বোর্ড এবং ১টি ফেক্সিলোড সিম বক্স ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, একটি অসাধু চক্র বিভিন্ন সময়ে কিছু অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল। বিদেশ থেকে টেলিফোন কল আসা ও যাওয়ার পরিমাণ বাড়লেও কাঙ্খিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। এনটিএমসি’র সহযোগীতায় র্যাব জানতে পারে যে, কতিপয় অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী রাজধানী ঢাকার বাড্ডা এলাকায় অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদি স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বর্হিবিশ্বের সাথে টেলিযোগাযোগের ব্যবসা করে আসছিল। অবৈধ এসকল যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয় বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি এই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার চক্রের সক্রিয় সদস্য। সে এবং তার সহযোগীরা দীঘদিন যাবৎ এই অবৈধ ভাবে এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। প্রচলিত সফটওয়ার ভিত্তিক সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল রাউট করত এবং অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদির মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যান্ত্রিক, ভার্চুয়াল এবং সফটওয়্যার ভিত্তিক কৌশল অবলম্বন করে অবৈধভাবে দেশের অভ্যন্তরে সার্ভার স্থাপন করে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও কলিং কার্ড, পেমেন্ট ও রিচার্জ সেবা প্রদান করতো বলে জনা যায়।
র্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার জানান, তাদের ব্যবহৃত সিস্টেমে বিদেশ হতে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মিনিট কল বাংলাদেশে আসতো। যার মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত আসামী প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করতো বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আসামী দেশের বাহির থেকে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে এনে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতো বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
মাহফুজুর রহমান আরো জানান, আটক আসামী অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এর বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পেমেন্টে (ইন্টারনেট ও সিম) ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রদান করতো বলে জানা যায়।
র্যাব বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় গেছে, আটক ব্যক্তি রাজু ২০১০ সালে দুবাই থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন। পরবর্তীতে সে দেশে এসে কম সময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় জনৈক মোঃ সবুজ’র সহায়তায় ওই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে আসামী মোঃ রাজু পলাতক আসামী সবুজের সহায়তায় ভিওআইপি সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে, দীর্ঘদিন যাবৎ ওই আসামী রাজধানীর বাড্ডা থানার জনৈক মোঃ গোলাম মোস্তফা (৭০) এর মালিকানাধীন ভাড়া বাসায় ওই ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল।
আটক আসামীকে জিঞ্জাসাবাদে জানা গেছে, ঢাকার পল্টন থানার শান্তিনগর মোড় ব্রাক ব্যাংক শাখায় তাহার নামে একটি একাউন্ট আছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি ও পলাতক আসামী অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা একে অপরের যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন (বিটিআরসি) থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিত অবৈধ ভিওআইপি যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা তৈরী করতঃ অবৈধভাবে টেলিযোগাযোগ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত আসামী চালিত সফ্টওয়ার ভিত্তিক সুইচ এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল রাউট করতো এবং অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদির মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যান্ত্রিক, ভার্চুয়াল এবং সফট্ওয়্যার ভিত্তিক কৌশল অবলম্বন করে অবৈধ ভাবে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ও রিচার্জ সেবা প্রদান করতো।
আটককৃত ব্যক্তি এবং পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।