• ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ডিসি কবির ও সানজিদা এবং গণমাধ্যম

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত আগস্ট ৩০, ২০১৯
ডিসি কবির ও সানজিদা এবং গণমাধ্যম

কয়েক দিন ধরে ফেসবুক, গণমাধ্যম, সামাজিকমাধ্যম সব জায়গায় চলছে জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবিরের যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনা। যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ডিসি কবির ও অফিস সহকারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা—দুজনেই নিজেদের আগ্রহে যৌনতার প্রামাণ্য চর্চায় সংযুক্ত হচ্ছেন। এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে অন্যান্য দেশের মতো ‘মুসলিম কান্ট্রি’ না হলেও ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এই দেশ যে ‘মুসলিম কান্ট্রি’ হিসেবে বিবেচিত, তা আমরা সবাই জানি। ধর্মীয় দিক দেখে আমাদের যতটা নিরাকার থাকার কথা, তা কি আমরা থাকছি? থাকছি না। ডিসি কবিরের মতো ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে। কয়টা ঘটনা ভাইরাল হচ্ছে? সংবাদমাধ্যমে আসছে? বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমেও বিনোদনের শেষ নেই। কেন? কারণ এতে পুঁজি ছাড়া লাভজনক ব্যবসার সুযোগ রয়েছে।

ডিসি কবির আমার আত্মীয় বা বন্ধু নন। সানজিদা ইয়াসমিন সাধনাও আমার কেউ নন। তারা যে কাজটি করেছেন, তা নিজেদের আগ্রহে করেছেন। এখানে বিষয়টিকে ঘৃণা করা ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই। কী শাস্তি হবে তাদের, তা বলার অধিকারও আমার নেই। 
আমি যা বলতে চাচ্ছি, তা একটু ভিন্ন। প্রথমত ডিসি কবিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনেক অভিযোগ রয়েছে। জামালপুর জেলার একজন সাংসদও আহমেদ কবিরের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। যৌনতার বিষয়টি ভাইরাল করা বা প্রমাণ করার জন্য যতটা প্রাধান্য পেয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণের চেষ্টা ততটা প্রাধান্য পায়নি। অথচ জেলার উন্নয়নের প্রশ্নে যৌনতা নয়, দুর্নীতির অভিযোগ খুব বেশি জড়িত। নিজ কার্যালয়ের বিশ্রামকক্ষে পরের স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িত হওয়ায় আজ ডিসিকে তার চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, জামালপুরের জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া আহমেদ কবিরের যে শাস্তি হবে, সেটি অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।

আমি বলব, শুধু গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক শ্রেণির মানুষ নয়, বরং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী নিজেও বিকৃতমনা। কেননা তাদের কাছে ডিসি কবিরের বিছানায় এক নারীর সঙ্গে তার নগ্নতার কাহিনি ও ভাইরাল ভিডিওটি বড় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জামালপুরের ডিসি প্রকল্পের নামে এবং অনন্য কাজে ঘুষ নেওয়াসহ যেসব দুর্নীতি করে বেড়াচ্ছিলেন ডিসি কবির বা অন্যরা—সে সব বিষয় কারও মনযোগ আকর্ষণ করে না। আজ তার দুর্নীতির ভিডিও যদি ভাইরাল হতো, তবে সেটা হতো সঠিক দৃষ্টান্ত। সরকারি দপ্তরগুলোর বিশেষ ব্যক্তিদের প্রতিদিনের জুলুম থেকে রক্ষা পেত সাধারণ জনগণ।

আরও একটি বিষয় ভাবার আছে। অপরাধ করেছেন দুজন নর-নারী। তাদের শাস্তি হোক, চাকরি থেকে বহিষ্কার হোক—ঠিক আছে। কিন্তু তাদের কারণে পুরো পরিবারের শাস্তি পাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত ও মানবিক? ডিসি কবিরের স্ত্রী, সন্তানেরা কি অপরাধ করেছে? সানজিদার সন্তান কি অপরাধ করেছে? তারা কেন শাস্তি পাবে? ডিসি কবির ও তার সহকর্মী নারী অপরাধ করেছেন তাদের স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের কাছে। আমাদের কাছে নয়। তাদের স্ত্রী-সন্তান-পরিবারকে শাস্তি দিতে দিন। আজ গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে তাদের যৌনতার ভিডিওটি ভাইরাল হচ্ছে, কিংবা যারা করছেন, তারা কি একবার ভেবে দেখেছেন, এমন ভিডিও প্রকাশের কারণে তাদের স্ত্রী সন্তানদের মানসিক অবস্থাটা কী হতে পারে? তারা কি কোনো দিন আত্মীয়, প্রতিবেশী, স্কুল, কলেজ কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলতে পারবে? কোনো দিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে? যারা আজ ডিসির দুর্নীতি ভাইরাল না করে, শাস্তির ব্যবস্থা না করে, তাদের পরিবারের স্বজনদের মানসিক অবস্থার কথা না ভেবে শুধু নোংরা যৌনতার ভিডিওটি ভাইরাল করে হাজার লাইক-কমেন্ট পাচ্ছেন, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে বিশেষ লেখক বা সাংবাদিক হয়ে যাচ্ছেন, তারা আসলেই সেলুকাস বাঙালি জাতি!

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930