রাজধানী লাগোয়া গাজীপুর জেলার টঙ্গী শহর। এই শহর যেমন রয়েছে শিল্প অধ্যাসিত শিল্প নগরী নাম তেমন রয়েছে মাদকের হাট নামেও ব্যাপক পরিচিতি। এই জেলায় প্রবেশ পথ হচ্ছে টঙ্গী। এই টঙ্গীকে মাদকের হাট ও বলা হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে মাদক, মদ এবং নারী থেকে শুরু করে সকল অপরাধ জগতের যেন একটা নো ম্যানস ল্যান্ডের আউটলেট এরিয়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে টঙ্গী। গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ২২টি বস্তি রয়েছে। এসব বস্তির অলিতে-গলিতে সর্বত্রই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাজা, হেরোইন, প্যাথেডিন ইনজেকশনসহ বিভিন্ন মরণ নেষা মাদক। টঙ্গীর এই বস্তি থেকে রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের মিটিং-মিছিলে লোক সংগ্রহ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অস্ত্রবাজিসহ বিভিন্ন কাজে বস্তিবাসীরাই বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে খুব প্রিয় ও সবচেয়ে কার্যকর। টঙ্গীর অধিকাংশ বস্তিই যেন অপরাধের স্বর্গরাজ্য। মাদকের হাট হিসেবে পরিচিত ভয়ঙ্কর বস্তিগুলো হচ্ছে, টঙ্গী বাজার এলাকার ছাগলের হাট বস্তি, হোসেন মার্কেট, কফিল উদ্দিন রোড, এরশাদ নগর বস্তি এখানে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর বসবাস। এই বস্তির মাদক নিয়ন্ত্রণ, শারমিন, লিপি,সৃতি,লাইলি,লায়লা, রাশিদা। নতুন বাজার এলাকার ব্যাংকের মাঠ বস্তি এখানে মাদক সম্রাজ্ঞী মোমেলা বেগম, আমতলি এলাকার কেরানীরটেক এই বস্তির মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছে দুই বোন কারিমা ও রুনা, এই দুই মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পুলিশের উপর হামলার ও অভিযোগ রয়েছে। তিস্তার গেইট মসজিদের পিছনে নার্গিস আক্তার, টঙ্গী জংশন স্টেশন এলাকায় কোহিনুর বেগম। নিশাতনগর চুড়ি ফ্যাক্টরির বস্তি, তেতুলতলা বস্তি, সিপাই পাড়া বস্তি, নামা বাজার বস্তি, কলাবাগান বস্তি,এই সব বস্তির নিয়ন্ত্রণে ফালান ও তার বোন জামাই মিস্টার এর দখলে। বেক্সিমকোর পেছনের বস্তি, পরানমন্ডলের টেক কাঠালদিয়া বস্তি, আউচপাড়া এলাকার মোল্লা বাজার বালুর মাঠ বস্তি, নোয়াগাও এলাকার বাহার আলীর টেক বস্তি, সেরে বাংলা রোড নেকারবাড়ী বস্তি, সাতইশ এলাকার নাজিম ফ্যাশনের পেছনের বস্তি, গুটিয়া বস্তি, ইন্টান্যাশনাল মেডিকেলের পেছনের বস্তি, খৈরতুলের ব্যাংকপাড়া বস্তিগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মাদক। অধিকাংশ বস্তিতে মাদক বিক্রি হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন এই মাদক কারবারিদের ধরতে রীতিমতো হিমসিম খেয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকার রিকশাচালক থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মাদকের এই ভয়ঙ্কর নেশায় জড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা হলেই বস্তিগুলোর প্রবেশদ্বারে বসে মাদকের হাট।
বস্তিগুলোর ৯০শতাংশ মাদক ব্যবসায়ী নারী। এসব মাদ্রক সম্রাজ্ঞী মাদকের কারবার করে গড়ে তুলেছে বিপুল সম্পদ, গাড়ি-বাড়ি তারপরও থাকেন বস্তিতে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের মাদকের হাট ও ক্রাইম জোন তালিকায় টঙ্গী পূর্ব এবং পশ্চিম থানা এলাকা। মাদকমুক্ত করার চেষ্টা চললেও কয়েক যুগ ধরে এই এলাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, টঙ্গীর মাদক পরিচালনায় নেপথ্যে রয়েছেন এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে মাদক ব্যবসায়ীরা ভোল পাল্টে সেই নেতার দলে যোগ দেয়।ফলে টঙ্গীর মাদক নির্মূল করতে প্রশাসনের চেষ্টা বার বার ব্যর্থ হয়। কিছু মাদক ব্যবসায়ী টাকার বিনিময়ে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পদ-পদবি নিয়ে এলাকায় তারা মাদকের রাজত্ব গড়ে তুলেছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছরে মাদক কারবার করে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন অনেকে। এখন তারা সরকার দলীয় রাজনীতিতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু অসাধু কর্মকর্তা এই মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করছেন।
এবিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইব্রাহিম খান জানান, মাদকের বিষয়ে আমাদের বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে। প্রতিদিন বিভিন্ন বস্তি এবং মাদক স্পট থেকে মাদকের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। টঙ্গীতে লাখ লাখ লোকের বসবাস। স্বল্প সংখ্যক পুলিশ তবুও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে।