• ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জুড়ীতে ‘নৌকাবাইচ ট্রাজেডি’র ৩৬ বছর আজ

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত আগস্ট ২৩, ২০১৯
জুড়ীতে ‘নৌকাবাইচ ট্রাজেডি’র ৩৬ বছর আজ

আজ ভয়াল ২২ আগস্ট। জুড়ীনদী নৌকাবাইছ ট্রাজেডির ৩৬ বছর। ১৯৮৩ সালের এদিনে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার (তৎকালীন কুলাউড়া থানা) জায়ফরনগর ইউনিয়নের কামিনীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন জুড়ী নদীতে নৌকাবাইছ চলাকালে মেরামতাধীন সেতু ভেঙ্গে প্রায় ১০ জন নিহত হন। অনেকে নিখোঁজ হন। আহত হন অসংখ্য মানুষ। 

স্থানীয়দের সাখে কথা বলে জানা যায়, এক সময়ের খরস্রোতা জুড়ী নদীতে প্রতি বছর নৌকাবাইছের আয়োজন হতো। দুর-দুরান্ত থেকে আগত ময়ূরপঙ্খী সাজে সজ্জিত বাহারী রঙ্গের নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ নিত। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ নৌকাবাইছ দেখতে এখানে এসে জড়ো হতেন। নৌকাবাইছকে কেন্দ্র করে এ সময় স্থানীয়দের মাঝে উৎসব আমেজ বিরাজ করতো। স্থানীয় ফখর উদ্দিন ও রজব আলীসহ কয়েকজন সৌখিন উদ্যোক্তা প্রতি বছর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ২২ আগস্ট রোববার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। চুড়ান্ত দৌঁড়ে তিনটি নৌকা উত্তীর্ণ হয়। ততক্ষণে নদীর দুই তীর প্রায় দুই কিলোমিটার লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। 

কামিনীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন নদীর (জুড়ী নদীর শাখা কন্টিনালা) উপর জুড়ী-ফুলতলা সড়কে অবস্থিত ব্রিটিশ আমলে নির্মিত লোহার সেতুটির তখন ভগ্নদশা। মেরামত কাজ চলছিল। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও মানুষের অবস্থানের ফলে সেতুতে তিল ধারনের জায়গা ছিল না। তখন বিকেল ৫টা। শুরু হয়েছে চুড়ান্ত দৌঁড়। হঠাৎ করে আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত বিকট শব্দ। চোখের পলকে সেতুটি উধাও। লোকজনসহ হারিয়ে যায় পানির নিচে। শুরু হয় আহাজারী, কান্নার রোল। 

মানুষের কান্নার শব্দ আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তুলে। হাজার হাজার মানুষের চোখের জল নদীর জলের সাথে একাকার হয়ে যায়। পাড়ে থাকা লোকজন যে যার মত করে নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে। নৌকা, কলাগাছ ও বাঁশের ভেলায় করে শিশু, যুবক ও বৃদ্ধসহ অসংখ্য মানুষকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসক ও কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।

পরবর্তীতে নদীসহ হাকালুকি হাওরে ভাসমান অবস্থায় কামিনীগঞ্জ বাজারের আক্কেল আলীর পুত্র সহিদুল ইসলাম ফয়সল (১১), পশ্চিম ভবানীপুরের তমছির আলীর পুত্র ময়না মিয়া (১১), ভোগতেরা গ্রামের মাওলানা চাঁন মিয়ার পুত্র ছালাম মিয়া (২২), ভবানীপুরের ছিটু গাজীর পুত্র তাজুল ইসলাম (১৫) এবং কাপনাপাহাড়ের মখলিছ (২৫) সহ প্রায় দশ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। শিশুসহ অগুণিত মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় নি। 

সেতুর নিচে চাপা পড়া অনেককে উদ্ধার করাও সম্ভব হয় নি। চুড়ান্ত দৌঁড় শুরু পূর্বে স্থানীয় দক্ষিণ জাঙ্গিরাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কুলেশ চন্দ্র চন্দ মন্টু উত্তর প্রান্ত থেকে সেতুতে উঠে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত যান। তন্ন তন্ন করে খোঁজে ছোট ছোট বাচ্চাদের তাড়িয়ে সেতু থেকে নামিয়ে নিয়ে আসার সাথে সাথেই ধসে পড়ে সেতুটি। সে দিন মন্টু স্যারের কল্যাণে এ প্রতিবেদকসহ অর্ধশতাধিক শিশুর প্রাণ রক্ষা পায়। নৌকাবাইছে সেতু ভাঙ্গার ঘটনাটি তখন আয়োজক ‘রজবের গজব’ নামে মানুষের মুখে মুখে ফিরছিল।

আনন্দের নৌকাবাইছটি পরিণত হয় বিষাদে। সেই থেকে আজ ৩৬ বছর। এ দীর্ঘ সময়ে জুড়ীনদীতে আর নৌকাবাইছ না হলেও মানুষের মন থেকে সেই ট্রাজেডি এখনও মুছে যায় নি। ভয়াবহ সে দিনক্ষণের কথা মনে হলে আজো লোকজন আঁতকে উঠেন।

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930