• ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১২ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

কোটিপতি শাহআলমের উন্থান হয় যেভাবে” টঙ্গী বাসির আতংন্কের নাম শাহআলম বাহিনী” 

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত মার্চ ২, ২০২২
কোটিপতি শাহআলমের উন্থান হয় যেভাবে” টঙ্গী বাসির আতংন্কের নাম শাহআলম বাহিনী” 

টঙ্গি থেকে ফিরে বিশেষ প্রতিনিধি : রাজধানীর সন্নিকটে গাজীপুরের টঙ্গীতে নতুন করে শাহআলম বাহিনীর উন্থান ঘটেছে। তার অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। মাত্র  ছয় হাজার টাকা মাসিক বেতন দিয়ে যার কর্মজীবন শুরু তিনি এখন কোটিপতি । জিরো থেকে হিরো কে এই কোটিপতি শাহ আলম। কি তার পরিচয় সেটি এখন জানা দরকার বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, অল্প দিনের ব্যবধানে তিনি বিপুল বিষয় সম্পত্তি এবং গাড়ি-ফ্লাটের মালিক হয়ে গেছেন। রাতারাতি শাহ আলম দলীয় সভাপতির পদ পেয়ে টঙ্গী স্টেশন রোডে বিভিন্ন পরিবহন সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজী, দখলবাজী. মাদক বিক্রি, সরকারী জায়গা অন্যায় ভাবে দখল করে  দোকানপাট বসিয়ে মাসিক ভাড়া আদায়, রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে কাঁচাবাজার বসানো, ক্ষমতা ও পেশীশক্তির বলে  দলবল নিয়ে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজী করছে বলে এলাকাবাসি ও ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর সংশ্লিষ্ট ও একাধিক বিশ্বস্ত তথ্য সূত্রের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁতীলীগের সভাপতি মো: শাহ আলম দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ও ক্ষমতার দাপটে গাজীপুর মহানগরী ও শিল্পনগরী টঙ্গীতে এক চাটিয়া অপরাধমূলক কর্মকান্ড দিব্যি চালিয়ে যাচেছন। গড়ে তুলেছেন বিশাল একটি সিন্ডিকেট। এমন কোন কাজ নেই যে শাহ আলম বাহিনী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা করেন না। টঙ্গী বাসির আতংক শাহআলম বাহিনী। তার সাঙ্গপাঙ্গরা রাত দিন চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী, রাহাজানি, ছিনতাই, কিশোর গ্যাং, মারামারি, জমি জবর দখল, মাদক বিক্রি ও সেবন এবং পরিবহন সেক্টরকে তারা পুরোপুরি ভাবে জিম্বি করে রেখেছেন। টঙ্গীতে পরিবহন সেক্টরে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজী, ইজতেমা মাঠে কামারপাড়া রোডে রাস্তা জবরদখল করে দখলবাজী, চাঁদাবাজী, অটোরিকসা ও সিএনজিতে অবৈধ উপায়ে টাকা অর্জন, ভয়ভীতি, হুমকী, অনিয়ম করা তার ও তার বাহিনীর নিত্য দিনের কাজ। কেউ যদি তাকে এবং তার বাহিনীর কাউকে বাধা দেয় তাহলে তাকে হতে হয় বলির পাঠা। জিরো থেকে হিরো হয়ে দাঁড়িয়েছে টঙ্গী থানা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে গাজীপুর মহানগর তাঁতীলীগের সভাপতি মো: শাহ আলম। এভাবেই কোটিপতি শাহআলমের উন্থান হয়। পাশাপাশি তার সীমাহীন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে দলীয় নেতাকর্মী, সুশীল সমাজ, সচেতন মহল সহ গাজীপুর ও টঙ্গী শিল্পাঞ্জলের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ আজ অতিষ্ঠ। এক কথায় বলতে হয় শাহ আলম যেন টঙ্গী এলাকার ডন।

অভিযোগ উঠেছে, এই অবৈধ অস্ত্রধারী সন্তাসী বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড মো: সৌকত, জুয়েল গংরা মিলে একটি বাহিনী গড়ে তুলেছে। তারা শাহ আলমের শেল্ডারে থেকে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ক্ষমতার বলে কামাই রোজগার করছে। রাজত্ব ও শাসন করছে গাজীপুরের শিল্পনগরী টঙ্গী শহর। রাতারাতি রাজনীতিতে এসে তার পালাবদল হয়েছে। ইতি মধ্যে শাহ আলম কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। টঙ্গীবাসির সাধারণ ও সচেতন মানুষ মনে করেন ”কে এই শাহ আলম ? কে তার আশ্রয় ও শেল্ডারদাতা। কি তার পরিচয় ? এমনটি মনে করছেন গাজীপুরের সচেতন মহল ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এটিই এখন দেখার একমাত্র বিষয়বস্তুু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেছে, খুব অল্পদিনের ব্যবধানে মো: শাহ আলম রাজনীতিতে এসে ক্ষমতার দাপটে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। টঙ্গীর মধ্য আরিচপুর তিনতলা মসজিদের পূর্বপাশে শেরে বাংলা রোডস্হ শাহ আলমের  একটি নির্মানাধীন ফ্লাট ছিল। সেটি তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। এছাড়া সে সম্প্রতি টঙ্গীর গাজী বাড়ি এলাকায় মিতালী হাউজিংয়ের চতুর্থ তলায় একটি বিলাস বহুল ফ্ল্যাটের মালিকানা হয়ে সপরিবার বসবাস করে আসছেন। একটি প্রায় ৩০/৩৫ লাখ টাকার দামী গাড়ি রয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসি ও ভুক্তভোগী এবং শাহআলমের পরিবারের একটি নির্ভযোগ্য সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে,   ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী স্টেশন রোডে তুরাগ পরিবহন, হিমালয় পরিবহন ও সেবা পরিবহনের প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদাবাজী করে  শাহ আলম ও তার সহযোগী ছিনতাইকারী সৌকত ও জুয়েল গংরা। মানুষকে সে কোন ধরনের তোয়াক্কা করেনা। কোন কিছু হলেই সে অবৈধ অস্ত্রের হুমকী দেয়। সে কারণে সকলে শাহআলম সহ তার পোষা বাহিনীর সদস্যদেরকে ভয়ের চোখে দেখে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টঙ্গীর পরিবহন সেক্টর থেকে তার ও তার বাহিনীর সদস্যদের মাসিক আয় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা । রাত যত বাড়তে থাকে তার দৈনিক আয় রোজগার তত বেশি বাড়তে থাকে। ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি. অসামাজিক কার্যকলাপ, দেহ ব্যবসা ও মাদক বেঁচাকেনা এবং চাঁদাবাজীর টাকা আয় থেকে গাজীপুর মহানগর তাঁতীলীগের সভাপতি মো: শাহ আলম বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে বলে অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসি।

অভিযোগ উঠেছে,  বেশ কিছু দিন আগে শাহআলম টঙ্গীর মধূমিতা মাদার হোম স্কুলের সামনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো: শফি আহমেদ শফির বোনের জামাতা মাসুদ রানা ওরফে মাসুদকে ধরে তার হাত-পা প্রকাশে কেটে ফেলে। ওই সময় তার নামে টঙ্গী মডেল থানায় একটি মামলা করে মাসুদের পরিবার। তাঁতীলীগের সভাপতি মো: শাহ আলম কিছু দিন আগে টঙ্গী বাজারস্থ হোন্ডা রোডের দক্ষিণ পাশে একটি সিমেন্ড তৈরী কারখানার খালি জায়গা তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে জবর দখল করতে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের চাপের মুখে জমি দখল করতে ব্যর্থ হয় শাহ আলম। এছাড়া  টঙ্গীর মধ্য আরিচপুর বেলতলা বস্তি এলাকায় তার একটি রিকসা গ্যারেজ রয়েছে। 

একটি নির্ভর যোগ্য সুত্র জানান, শাহ আলমের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ হলো যুব দলের নেতা এবং ক্যাডার রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি এক সময় জার্মানে ছিলেন। বর্তমানে আজাদ টঙ্গীতে এসেছেন। ইতিপূর্বে টঙ্গী মুন্সিপাড়া বাসায় মেডিসিন কর্ণার নামে তার একটি দোকান ছিল। ওই দোকানের পিছনে বিএনপি ও যুব দলের একটি অফিস ছিল।  ওই অফিসে দলীয় নেতাকর্মীরা এসে প্রতিনিয়তই আড্ডা দিত। আর তার পাশে রয়েছে আজাদের ছোট ভাই গাজীপুর মহানগর তাঁতীলীগের সভাপতি শাহ আলমের রাজনৈতিক অফিস । সে ও অনুরূপ ভাবে এখানে বসে সন্ধ্যার পর আড্ডা জমায়। অপর দিকে, শাহ আলমের বড় ভাইয়ের নাম মৃত আবু তাহের। তাহের ছিলেন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও টঙ্গী আঞ্জলিক শ্রমিক দলের সভাপতি এবং বেশ কিছু দিন আগে আবু তাহের অসুস্থ অবস্হায় মারা যান। তার
মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই কুখ্যাত শাহ আল সিবিএ সভাপতি হউন। তার পিতার নাম মরহুম আমিন উল্লাহ তালুকদার। দাদা মরহুম ইয়াকুব আলী তালুকদার।

একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, শাহ আলম ১৯৯২ সালে টঙ্গীতে বাংলাদেশ ব্রেড ফ্যাক্টরীতে মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী শুরু করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সোর্ড ব্লেড ফ্যাক্টরী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হন। তার পূর্বে বিএনপি শাসনামলে একই কারখানার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন শাহ আলমের বড় ভাই মৃত মো: আবু তাহের। নিজেকে শাহ আলম বিএ পাশ বলে দাবী করলে ও আসলে সে আন্ডার মেট্রিক পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন বলে তার পরিবার, শাহআলমের সহকর্মী ও দলীয় সুত্রে এতথ্য জানা যায়।

সূত্র বলছে, টঙ্গীতে রাষ্ট্রায়ত্ব বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লি. কারখানার কারিগর ও সিবিএ’র সভাপতি শাহ আলমকে সীমাহীন দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারনে অবশেষে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, কর্মকর্তাদের মারধর, আত্মীয়করণ, কারখানার শৃংঙ্খলাভঙ্গ ও অনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করার দায়ে গত ১১ নভেম্বর (স্মারক নং-বিবিএলিঃ/প্রশাসন৬৪/২০২০/১৬৫) মূলে চাকরি থেকে টার্মিনেশন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আত্মীয়-স্বজনসহ তারই আপন ছোট ভাই শাহ আলমকে গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকার জি.কে আর্দশ হাই স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশের জাল সনদ দিয়ে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেন।
সভাপতি হিসেবে ২০১১ সালে দায়িত্ব নেয়ার পরই শাহ আলম টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে।

এব্যাপারে গাজীপুর মহানগর তাঁতীলীগের সভাপতি মো: শাহ আলম সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। সে কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভম হয়নি।

এব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে এবং শাহআলম বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি, গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সিপার (এসপি)সহ সংশ্লিষ্টদের জরুরি আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসি।

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031