• ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কে এই জিকে শামীম?

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
কে এই জিকে শামীম?

বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, এফডিআর, মদ ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় দেহরক্ষীসহ জি কে শামীমকে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছে। জুমার নামাজের পর তাকে গ্রেফতারের খবর স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও অনলাইন পত্রিকার সুবাদে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কে এই জি কে শামীম? জনমুখে ফিরছে এ প্রশ্ন।

যুবলীগের সমবায় সম্পাদক হিসেবে পরিচয়দানকারী জি কে শামীমের পূর্ণ নাম এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম। নারায়ণগঞ্জ শাখা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও তিনি। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর যুবদলের সহ-সম্পাদক ছিলেন। জি কে শামীম বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাসের খুবই ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে।

প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীম রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকার সরকারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ ঠিকাদারি কাজ তার নিয়ন্ত্রণে। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে গণপূর্ত বিভাগে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র পর্যন্ত শামীমের ঠিকাদারি হাত বিস্তৃত। যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে জি কে শামীম পরিচয় দিলেও শুক্রবার উভয় সংগঠন থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।

যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান বলেন, জি কে শামীম যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো পদে নেই। তবে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে থাকতে পারেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হাই বলেন, ৭১ সদস্যের জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির কোনো পদে জি কে শামীম নামে কেউ নেই। সহ-সভাপতিসহ ছয়টি পদ নানা কারণে শূন্য আছে। ওইসব পদে কারও নাম প্রস্তাব করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি। সুতরাং এ নামের কেউ দলীয় পদে থাকার কথা নয়।

জি কে শামীমের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে। তার বাবা মো. আফসার উদ্দিন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সন্মানদী ইউনিয়নে বাড়ি হলেও শামীম ১০ম শ্রেণি পাসের পর ঢাকায় চলে আসেন।

ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় তিনি বড় হয়েছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেজ। বড় ভাই গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন। অপর ভাইয়ের সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি।

বনানীতে বসবাসকারী জি কে শামীমের অফিস নিকেতনে। নিকেতনের অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাসাবো এলাকায় তিনি দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন।

জানা গেছে, বাসাবোর কদমতলার ১৭ নম্বরের পাঁচতলা বাড়ি জি কে শামীমের। বাড়িটি ম্যানেজার হিসেবে দেখাশোনা করেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন সহ-সভাপতি। বাসাবোতে তার আরও তিনটি ভবন আছে। ডেমরা ও দক্ষিণগাঁও ছাড়াও সোনারগাঁ উপজেলা, বান্দরবান ও গাজীপুরে কয়েকশ’ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।

রাজনীতি ও ঠিকাদারি করার কারণে বেশ প্রতাপ আর প্রভাবের অধিকারী শামীম। অস্ত্রধারী দেহরক্ষী পরিবেষ্টিত হয়ে তিনি চলাফেরা করেন। তিনি গাড়িবহর নিয়ে চলাফেরা করেন। তার গাড়ির আগে-পরে থাকে একাধিক গাড়ি।

তিনি নিজেই অনেকটা ভিআইপি মর্যাদার পরিস্থিতি তৈরি করেন। রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে শুরু করে সামাজিক অনুষ্ঠান যেখানেই তিনি যান সঙ্গে থাকে দেহরক্ষী।

সবুজবাগ-বাসাবো এলাকায় জি কে শামীম বেশ পরিচিত। তার ক্ষমতা ও অর্থের দাপট সম্পর্কে এলাকাবাসী ওয়াকিবহাল। তাই কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না।

শুক্রবার সরেজমিন শামীমের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার অভয়ারণ্য গণপূর্ত বিভাগের পরিচিত ঠিকাদারের কাছ থেকেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার নাম শুনেই অনেকে আঁতকে ওঠেন। কথার জবাব না দিয়ে তারা চলে যান।

তবে নাম প্রকাশ না করে বাসাবো ও সবুজবাগ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, যুবদলের ওয়ার্ড পর্যায়ে রাজনীতির মাধ্যমে শামীমের উত্থান। মির্জা আব্বাসের ভাই মির্জা কালু ও মির্জা খোকনের ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেন শামীম। তাদের হাত ধরে তিনি গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু ও পরে নিয়ন্ত্রক বনে যান। এক পর্যায়ে ঢাকা মহানগর যুবদলের সহ-সম্পাদকের পদ তিনি লাভ করেন। বর্তমান সময়ের মতো বিএনপি আমলেও গণপূর্ত ভবন ছিল তার নিয়ন্ত্রণে।

হাকালুকিডটনেট/২২সেপ১৯/এমএইচ



September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930